ঢাকা, সোমবার:
পহেলা বৈশাখের সকাল গড়িয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ঢাকা পরিণত হয় এক রঙিন উৎসবস্থলে। শহরের রাজপথে লাল পাঞ্জাবিতে পুরুষ, আর সাদা-লাল শাড়িতে নারীরা, মুখে-হাতে আলপনা ও ফুলের টায়রা পরে তরুণীরা ঢাকাকে রাঙিয়ে তোলে বৈশাখী রঙে। রাজধানীর মতো দেশের প্রতিটি প্রান্তেই বর্ণিল আয়োজনে উদযাপিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২।
নারায়ণগঞ্জে প্রাণবন্ত শোভাযাত্রা:
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চাষাঢ়া থেকে বর্ণাঢ্য বৈশাখী শোভাযাত্রা বের হয়। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও চারুকলার শিক্ষার্থীরা রঙিন মুখোশ, বাঘ-প্যাঁচা, রাজা-রানীর প্রতিকৃতি ও নকশা নিয়ে অংশ নেয়।
জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “এই উৎসব আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রকাশ। আমরা চাই সবাই মিলেমিশে দেশকে এগিয়ে নিতে।”
পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার আশ্বস্ত করেন, “সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে নববর্ষ উদ্যাপিত হচ্ছে।”
খুলনায় লোকজ সংস্কৃতির ঘ্রাণ:
রেলওয়ে স্টেশন থেকে বের হওয়া বর্ষবরণ শোভাযাত্রা শহীদ হাদিস পার্কে গিয়ে শেষ হয়। সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন আনন্দ মিছিলে।
বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার বলেন, “নববর্ষ আমাদের লোকজ ঐতিহ্য, যা সার্বজনীন। এবারে খুলনার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসবে শামিল হয়েছেন।”
কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারের শিশুদের জন্য বিশেষ খাবার ও সাংস্কৃতিক আয়োজনও ছিল দিনব্যাপী।
রাজশাহীতে বৈশাখী প্রাণের উচ্ছ্বাস:
সকালে সিএন্ডবি মোড় থেকে বের হওয়া জেলা প্রশাসনের শোভাযাত্রা শিশু একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়। রাজশাহী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও পৃথক শোভাযাত্রা বের হয়।
রাবির চারুকলা অনুষদ থেকে অনুষ্ঠিত হয় অঞ্চলটির বৃহত্তম শোভাযাত্রা। শিশু একাডেমিতে ছিল চিত্রাঙ্কন, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা।
এছাড়া বরেন্দ্র জাদুঘর ও রাজশাহী উদ্যান দিনটিতে শিশুদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।
বরিশালে ভিন্ন মাত্রায় বৈশাখী আয়োজন:
উদীচীর আয়োজন ও জেলা প্রশাসনের বৈশাখী শোভাযাত্রা ছিল বৈচিত্র্যময়। চারুকলার শিক্ষার্থীরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানোর পর বের হয় শোভাযাত্রা, যেখানে ছিল পাটি, পালকি, ঢেঁকি, ধানের শীষসহ গ্রামীণ সংস্কৃতির নানা উপাদান।
বেলস পার্কে চলছে সাত দিনের বৈশাখী মেলা।
বক্তারা বলেন, “এই উৎসব আমাদের প্রাণের; বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে এটাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিজ্ঞা।”
চট্টগ্রামে নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তায় রঙিন আয়োজন:
চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হওয়া র্যালিতে ছিল প্রাণীর মুখোশ, মাছ ও ঘোড়ার প্রতিকৃতি। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণেও আয়োজন ছিল জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও শোভাযাত্রার।
শিশু একাডেমির আয়োজনে শিশুদের জন্য ছিল প্রতীকী মুখোশের র্যালি।
ফেনীতে উৎসবের নতুন মাত্রা:
পিটিআই মাঠে শুরু হয়েছে সাত দিনের মেলা। সকালেই ছিল বিশাল শোভাযাত্রা, যাতে অংশ নেয় সহস্রাধিক মানুষ।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, “এবারের বর্ষবরণে মানুষ অভূতপূর্বভাবে অংশ নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন সর্বদা সজাগ।”
সন্ধ্যায় লোকনাট্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে জমে উঠবে বৈশাখের আসর।
বাংলা নববর্ষ ঘিরে দেশজুড়ে বইছে উৎসবের প্রাণ। নানা বয়স, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মিলিত হয়ে উদ্যাপন করছে বাঙালির চিরায়ত এই সংস্কৃতি। এটি শুধু উৎসব নয়, বরং জাতিসত্তার প্রকাশ ও ঐক্যের প্রতীক।
Leave a Reply