ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অল্পদিনে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরে ‘মাফিয়া’ হিসাবে পরিচিতি পান এনডিই এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রায়হান মোস্তাফিজ। গণপূর্তের বড় বড় কাজেও ছিল তার একচেটিয়া প্রভাব। মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে একক ও যৌথভাবে শুধু সড়কের ৮ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেয় রায়হানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স (এনডিই)। এসব কাজ বাগিয়ে নিতে ব্যবহার করেন নিজের স্ত্রী ও লালিত পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীকে। সম্প্রতি তার বাহিনী ও রায়হান মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে বনানী থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন একটি ইন্টারনেট কোম্পানীর সিইও।
চলতি বছর নভেম্বর মাসের ১৪ তারিখ সৈয়দ একরাম আব্বাস বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এজাহারে রায়হান মোস্তাফিজ সহ মোটা ৫ জন ও অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনকে আসামী করা হয়। যাহা বনানী থানার মামলা নং- ১৭, তারিখ- ১৪/১১/২০২৪। ধারা- ১৪৩/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৪২৭/৪৪৭/৫০৬/১১৪/৩৪ পেনাল কোড। উক্ত মামলায় রায়হান মোস্তাফিজকে ২ নম্বর আসামী করা হয়।
এ মামলা থেকে বাঁচতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বাদীর সাথে মিমাংসা করেন রায়হান মোস্তাফিজ। ইতিমধ্যে মামলাটি প্রত্যাহার করতে সংশ্লিষ্ট আদালতে বাদী আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন বনানী থানার ওসি। অভিযোগ রয়েছে, অভিজ্ঞতা ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটিকে একের পর এক বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয়। এতে বিস্মিত হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা; কিন্তু কিছু বলতে পারেননি। এখন তারা বলছেন, ক্ষমতার কালো কাপড়ে বাঁধা ছিল তাদের চোখ। রায়হানের স্ত্রী পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা সাবেক চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটনের স্ত্রীর বোন। এ সুবাদে লিটনের ভায়রা হওয়ায় রায়হানের দাপটে সবাই ছিলেন অসহায়। ভায়রার তদবিরেই সড়কের ঠিকাদারি কাজের ‘মাফিয়া চক্রের’ সদস্য বনে যান তিনি। ব্যবসায়িক অংশীদার করেন ববি সিদ্দিকীকে। তাদের পেছন থেকে মদদ দেন তারেক সিদ্দিকী। তাদের সবাই রায়হানের শ্বশুরবাড়ির দিকের আত্মীয়।দুদক থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ সংক্রান্ত নথিতে বলা হয়েছে, ৬ বছরে শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠতার দাপটে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ পেতে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেনি এনডিই। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিম্নমানের কাজ করে বিল তোলাসহ বেশি কাজ দেখিয়ে বাড়তি বিল আদায়ের মতো এন্তার অভিযোগ আছে।
অভিযোগ উঠেছে-এনডিই কর্ণধার রায়হান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার একদফার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অর্থের জোগান দিয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তায় ব্যবহৃত এবং কর্মকর্তাদের নামে থাকা লাইসেন্সকৃত মারণাস্ত্র গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় ব্যবহার করা হয়। অভিযোগ আছে, এনডিই রেডিমিক্স কোম্পানির নামে বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার করা হয়েছে। কোম্পানিটি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান থেকে পাথর এবং চীন থেকে রেডিমিক্স সরঞ্জাম আমদানি করে। এসব আমদানিতে ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয়েছে। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে হুন্ডির মাধ্যমেও বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে।এতসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সওজ ছেড়ে নজর দেন স্থানীয় সরকার বিভাগে। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনস্থ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক অরুণ কুমার চৌধুরীর সাথে বেশ শখ্যতা গড়ে তুলেছেন তিনি।
গোপন অনুসন্ধানে জানা যায়, পতিত সরকারের আমলে বরাদ্দকৃত কাজ পাইয়ে দিতে লোভনীয় অংকের টাকা খরচ করছেন এনডিই। উক্ত প্রতিষ্ঠান টেন্ডার তালিকায় পিছনে থেকেও দৈব শক্তিবলে কাজ বাগিয়ে নিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক অরুন কুমার চৌধুরীর সাথে লবিং করছেন এবং অরুণ কুমার চৌধুরী কাজ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ ব্যাপারে অরুণ কুমার চৌধুরীকে একাধিকবার কল করেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।