নিজেকে জাতীয় নাগরিক কমিটির দক্ষিণের সদস্য সচিব পরিচয় দেওয়া মোঃ আবুল হাসনাতের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে দেশব্যাপী ছাত্র জনতার বিপ্লবের বিরোধিতা এবং যুবলীগের মিছিলে অংশগ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ৪ আগস্ট খিলগাঁও হাড় ভাঙ্গা মোড়ে যুবলীগের একটি মিছিলে তাকে দেখা যায়। ৫ আগষ্টের আগের যুবলীগের বাপ্পীই এখন নাগরীক কমিটির হাসনাত। খিলগাঁওয়ে তাকে যুবলীগের বাপ্পী হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিল এই হাসনাত।

অভিযোগ রয়েছে, বাসদ ছাত্রলীগের কর্মী হয়েও আবুল হাসনাত দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন। অথচ বাসদ আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোটের একটি দল। তার বাবা মান্নান সাহেবেরও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর খিলগাঁও থানায় ডাকা হলে আবুল হাসনাত জাতীয় নাগরিক কমিটির নাম ব্যবহার করে তার বাবাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন। এলাকাবাসী মান্নান সাহেবকে আওয়ামী লীগের একজন সুবিধাবাদী ও সমর্থক বলে মনে করেন। খিলগাঁওয়ে প্রায় দুই বিঘা জমি একটি সামাজিক সংগঠনের নামে দখল করে আওয়ামী লীগ শাসনামল থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আসছেন হাসনাত ও তার বাবা।২০০৩ সালের তালিকাকৃত শিষ্য সন্ত্রাসী মুরাদের সাথে যোগাযোগ করা এবং অস্ত্র নিয়ে আসারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তার পরিবার ছাত্রদের রাজনীতিতে যোগ দেয় এবং নিজেকে বৈষ্ণববিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষের শক্তি হিসেবে পরিচিত করে। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তাদের বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের জমি ভোগদখল করেছেন তারা। রাজনীতিক প্রভাব খাটিয়ে হাসনাতের চাচার বাড়ী দখল করে রেখেছে প্রায় এক যুগ ধরে।
শুধু আবুল হাসনাত নন, সবুজবাগ থানা প্রতিনিধি কমিটিতে জাসদ ছাত্রলীগের আলামিন রহমান রিয়াদকেও অন্তর্ভুক্ত করিয়েছেন তিনি। আলামিন রহমান রিয়াদ ২০১৯ সালে জাসদ ছাত্রলীগের সবুজবাগ থানা কমিটির সভাপতি ছিলেন এবং ঢাকা দক্ষিণের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের দোসর চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে বিভিন্ন কাজে যুক্ত ছিলেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাস জুলাই বিপ্লবে ছাত্র জনতার ওপর নির্বিচারে হামলা চালান এবং বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।


আলামিন রহমান রিয়াদের বিরুদ্ধে ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছ থেকেও নানা সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনের সময় সাহায্য করা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাহাঙ্গীর হোসেনকে এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত করার কাজ করেছেন তিনি। জাহাঙ্গীর হোসেনও বর্তমানে পলাতক এবং ৪ আগস্ট বাসাবো এলাকায় রামদা হাতে দেখা গেছে তাকে।

সবুজবাগ, মুগদা ও খিলগাঁও থানায় আবুল হাসনাতের পরিচিত জাসদ, বাসদ ও আওয়ামী লীগের লোকদের জাতীয় নাগরিক কমিটিতে যোগদানের মাধ্যমে তিনি নিজের রাজনৈতিক প্রভাব বজায় রেখেছেন। এর মাধ্যমে তিনি এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ থানা থেকে বিভিন্ন সময় সুবিধা নিয়েছেন এবং তদবির ও টেন্ডার বাণিজ্যের জন্য জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
Leave a Reply